Tuesday, November 6, 2012

স্তন ক্যান্সার, কারণও প্রতিকার part 1



ফাইব্রো এডেনোমা এবং সিস্ট
মহিলাদের স্তনে গুটি হওয়া অথবা গুটিভাব অনুভূত হওয়া খুবই সাধারণ ঘটনাএসব গুটির বেশির ভাগই কোনো ক্ষতিকর কিছু নয় অর্থাৎ এগুলো ক্যান্সার নয়
মাসিকের পূর্বে স্তনে কিছু পরিবর্তন হয় স্তনের টিস্যু নানা হরমোন দ্বারা প্রভাবিত হয় ফলে স্তনে চাকা অথবা গুটি ভাব বা ব্যথাও অনুভবকরা যেতে পারেনিজেদের স্তনের স্বাভাবিক পরিবর্তনগুলো মহিলাদের সবারই জানা প্রয়োজনতাহলে অস্বাভাবিক কিছু হলে সহজে বোঝা যাবে মাসিকের পূর্বে সাধারণত স্তনে ব্যথা এবং গুটি মনেহতে পারেএ রকম অবস্থায় দুশ্চিন্তা না করে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়াইশ্রেয়ডাক্তার আপনাকে পরীক্ষা করে দেখে প্রয়োজন হলে আরো কিছু টেস্টের ব্যবস্থা করতে পারেনসাধারণত যেসব টেস্ট করা হয় সেগুলো হলো-
মেমোগ্রাম
মেমোগ্রাম স্তনের এক্স-রে৩১ বছরের বেশি বয়সে মেমোগ্রাম সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয়কারণ এইবয়সে স্তনের টিস্যু কম গ্লান্ডুলার থাকে এবং ছবি ভালো আসে
ফাইন নিডেল অ্যাসপিরেশন সাইটোলজি
একটি সূক্ষ্ম সূচ দ্বারা স্তনের চাকা থেকে কিছু কোষ সরিয়ে নিয়ে তা অণুবীক্ষণ যন্ত্র দ্বারাপরীক্ষা করা হয়এই পরীক্ষা করতে সাধারণত খুব একটা কষ্ট হয় না
আলট্রাসাউন্ড
শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করে এই পরীক্ষা করা হয়ছোট মাইক্রোফোন জাতীয় যন্ত্রস্তনের ওপর ধরা হয়স্তনের গুটি বা গুটি গুটিভাব এই পরীক্ষায় ধরা পড়েসব বয়সের মহিলাদের জন্য এই পরীক্ষা অত্যন্ত কার্যকরএই টেস্টগুলোর সাথে রোগীকে পরীক্ষা করে ডাক্তার নিশ্চিত হন যে স্তনে গুটি বা চাকা হয়েছেকিনাএই পার্থক্যটা বোঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণফাইব্রোঅ্যাডেনোমা এবং সিস্ট এই দুটি সবচেয়ে অক্ষতিকর গুটি
ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা
১৫-৪০ বছরের মধ্যে ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা হয়স্তনে একটি শক্ত চাকা যা চাপ দিলে বেশ সহজে নড়াচড়াকরেআকৃতিতে বাড়তে অথবা কমতে পারে, সময়ে চাকাটা মিলিয়েও যেতে পারেপরীক্ষা করে যদি ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা নিশ্চিত হওয়া যায় তাহলে অপারেশন না করলেও চলে
তবে রোগী যদি ৩০ বছরের বেশি বয়সী হয় তাহলে ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা অপারেশন করে সরিয়ে ফেলার পরামর্শ দেয়া হয়জেনারেল অ্যানেস্থেসিয়া দিয়ে ছোট অপারেশন করে গুটিটা সরিয়ে ফেলা হয়এক্ষেত্রে শুধু একটা ছোট কাটা দাগ থাকে যা আস্তে আস্তে পরে মিলিয়ে যায়অনেক সময় স্তনের অন্য জায়গায় ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা নতুন করে আবারো হতে পারে
সিস্ট
স্তনের সিস্ট একটি তরল পদার্থভরা থলিহঠাৎ করে সিস্ট হলে ব্যথা হতে পারে৩০-৫০ বছর বয়সে সাধারণত এগুলো হয়সিস্টের চিকিৎসাও খুব সহজএকটি ছোট সূচ দিয়ে চাকা হতে পানিটা বা তরল পদার্থটা বের করে ফেলা হয়কোনো জটিলতা না থাকলেগুটিটা সম্পূর্ণরূপে চলেযায়যে মহিলাদের সিস্ট হয় তাদের পরবর্তীতেও স্তনের বিভিন্ন জায়গায় সিস্ট হতে পারেঅনেক সময়এসব সিস্ট অপারেশন করে সরানো হয়ওষুধ দ্বারাও কোনো কোনো সময় চিকিৎসা করা প্রয়োজন হতে পারে ফাইব্রোঅ্যাডেনোমা এবং সিস্ট ক্যান্সার নয় এবং এগুলো হলে ক্যান্সারের সম্ভাবনাকে বাড়ায় নামহিলাদের নিজেদের স্তন সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে বিশ্বে প্রতি বছর ৫ লাখ নারী স্তন ক্যান্সারে মারা যায়শুধু ব্রিটেনেই প্রতি বছর ৪৫ হাজার নারী এ রোগেআক্রান্ত হয়আর বাংলাদেশে প্রতি বছর এ রোগে আক্রান্ত হয় ২২ হাজার নারী এবং মারা যাচ্ছে ১৭ হাজার নারীএমন অবস্থায় চিকিৎসকরা বলছেন সচেতনতার মাধ্যমে ৯০% স্তন ক্যান্সার রোধকরা সম্ভব রোগের সুসপষ্ট কারণ এখনো অজানা তবে পারিবারিক ইতিহাস থাকলে, বেশি মোটা হলে, ২০ বছরের আগে বিয়ে হলে, ৩০ বছরের পর প্রথম সন্তান জন্ম হলে, সন্তানকে বুকেরদুধ না খাওয়ালে, নিঃসন্তান থাকলে, বিড়ি-সিগারেট, তামাক সেবন, কম শারীরিক পরিশ্রম, দীর্ঘদিন উচ্চরক্তচাপে, বহুমূত্র রোগচাই আমার দেশের প্রতিটি নারী হবে সচেতন এবং কুসংস্কারমুক্ত, সুখী জীবনের মূলমন্ত্র সকলেরই জানা দরকার
ম্যাস্টালজিয়া
অনেক নারীই কোনো না কোনো সময়ে স্তনের ব্যথা অনুভব করেনচিকিৎসাবিজ্ঞানে এই অবস্থাকে ম্যাস্টালজিয়া বলেহরমোন নির্ভরশীল পরিবর্তন এর কারণবুকে ব্যথার সাথে সাথে চাকা বাগুটি অনুভব হয় এর কারণে মহিলারা ব্যথায় কষ্ট পান এবং অনেক দুশ্চিন্তা করেনআসলে এটা খুব মারাত্মক কিছু নয়তবে দুশ্চিন্তার বড় কারণ হতে পারে হরমোন নির্ভরশীল পরিবর্তনসাধারণত ৫৫ বছর বয়সের নিচে এবং যেসব মহিলাদের মাসিকের আগে ব্যথা ও গুটির সমস্যা বাড়েমাসিকের পর কমে যায়রক্তে নানা হরমোন লেভেল স্তনের টিস্যুকে প্রভাবিত করেকোনো কোনো সময় ব্যথা খুব তীব্র হয় এবং সব সময় থাকে এই ব্যথা হাতেও ছড়িয়ে পড়তে পারেঅনেকে ভাবেন ক্যান্সারের সম্ভাবনাআসলে এটা ক্যান্সার নয়জেনে রাখুন ক্যান্সারের কারণে ম্যাস্টালজিয়া হয় না স্তনের গুটি বা ম্যাস্টালজিয়া হলে অবশ্যই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত
তিনি পরীক্ষা করে অন্য কোনো কারণে অসুবিধা হচ্ছে কি না বলতে পারেনঅন্য কোনো কারণে গুটি বা ব্যথা হয়েছে কি না তা বেরকরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ
চিকিৎসা
একবার যখন এইচডিসি রোগ ধরা পড়ে তখন রোগিণীকে আশ্বস্ত করা যায়রোগীর যদি উপসর্গ খুব বেশি না থাকে কোনো ওষুধ পত্রের প্রয়োজন হয় নাবেশির ভাগমহিলার জন্য এটাই প্রযোজ্য
এইচডিসি নিজে নিজে ভালো হয়ে যায় তবে কয়েক মাস সময়লাগেযদি উপসর্গের জন্য বেশি কষ্ট পেয়ে থাকেন তাহলে বিভিন্ন রকমের চিকিৎসা করে দেখা যেতে পারেযেমন-
ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল
অনেক সময় দেখা গেছে ইভিনিং প্রিমরোজ অয়েল ক্যাপসুল খেলে স্তনের ব্যথা এবং চাকা ও শক্তভাবকমে যায়বিশেষ করে মাসিকের পূর্বে যখন এসব উপসর্গ বাড়েসব মহিলার ক্ষেত্রে এটা কাজ নাও করতে পারে এবং এটা কাজ করতে কয়েক সপ্তাহ লাগে
কেফিন
চা অথবা কফি বেশি খেলে এইচডিসি বাড়তে পারেচা বা কফি (যেগুলোতে কেফিন থাকে) খাওয়া কমিয়ে দিলে অনেক সময় এইচডিসি ভালোর দিকে যায়

ডা. বশির আহমেদ তুষার

আরো দেখুন স্তন ক্যান্সার, কারণও প্রতিকার part 2 


No comments:

Post a Comment