Tuesday, November 6, 2012

নর-নারীর যৌনানুভূতি, যৌনবিজ্ঞান আরিফ মাহমুদ সাহাবুল



সেক্স অর্থ যৌনতা বা যৌন উত্তেজনাএই সেক্স শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দসেক্সাসথেকেপৃথিবীতে এমন কোনো মানুষ নেই যার কোনো সেক্সুয়াল অনুভূতি নেইপ্রায় প্রতিটি মানুষই যৌন উত্তেজনা, যৌন মনোভাব, যৌন চিন্তা ও কামনা-কল্পনা করতে পছন্দ করেমানুষের জীবনের সাথে সেক্স ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েআছে, মিশে আছে রক্তের প্রতিটি বিন্দুর সাথে জেনেটিক কোডের ধারাবাহিকতায়
সেক্স থেকেই উদ্ভব হয়েছে মডার্ন সেক্সোলোজি বা যৌনবিজ্ঞানমনে হতে পারে সেক্স এতো শিক্ষিত, অশিক্ষিত সব মানুষই জানে হ্যাঁ, জানে ঠিকই কিন্তু পুরোপুরি জানে নাজানে না এর সুশৃঙ্ক্ষলিত কারুকার্যময় বিজ্ঞান ভিত্তিক নিয়ম কানুনতাইতো তৈরি হয়েছে যৌনবিজ্ঞানের আর যে জিনিসটায় বিজ্ঞানের ছোঁয়া লাগে সে জিনিস হয়ে ওঠে আরো সুচারু আরো রুচিসম্পন্ন এবং আরো সহজসাধ্য গ্রহণীয়সেক্সকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে বিশ্লেষণ করতে সবসময়ই মানুষ এক প্রকার অহেতুক লজ্জাবোধ করে এসেছেসমাজ, রাষ্টনীতি সবাই কোমর বেঁধে এক সঙ্গেযৌনবোধের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেসেন্ট ভিক্টরের ধর্ম মন্দিরে ধর্ম যাজকগণের যৌনবোধ সংযত করার জন্য বছরে প্রায় পাঁচবার তাদের দহের রক্ত বের করে নেয়া হতদুনিয়া জুড়ে কোনো যুগে কোনো দেশেই এরকম ব্যবস্থার কোনো কমতি ছিল নাকিন্তু যৌন জোয়ারকে কে আটকাতে পারেকোনো মানুষেরই যৌনবোধের তীব্রতা তাতে কিছুমাত্র কমেনিবরং দিনের পর দিনইএই যৌন অনুভূতি মানুষের মাঝে বাড়তেই থেকেছেযা এখনও পর্যন্ত চলছে, চলবে পৃথিবী ধ্বংসপ্রাপ্ত বা কেয়ামত হওয়ার আগ মুহূর্ত পর্যন্ত
সেক্সুয়াল অনুভূতি বা যৌনতা কি? সহজ কথায় বলা যায় যে, এক লিঙ্গের প্রাণী বিপরীত লিঙ্গের প্রাণীর দিকে যে দৈহিক এবং মানসিক আকর্ষণবোধ করে তাই হল সেক্সুয়াল অনুভূতি বা যৌনতাযৌনবোধ আছে বলেই মানুষ এতসুন্দরসুন্দর তার বাহ্যিক প্রকাশময়তাযৌনতা বা সেক্সকে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তাভারতীয় পন্ডিতগণও উপলব্ধি করেছিলেনগ্রীকও মিশরীয় পন্ডিতগণ ও প্রসঙ্গক্রমে যৌনাঙ্গের পরিচয় ও সান জন্মের বিষয় উল্লেখ করেছেনতবে সুশৃঙ্ক্ষল পদ্ধিতিতে যৌন তত্ত্বের বিশ্লেষণেরঅনুপ্রেরণা সম্ভবত ভারতীয় পন্ডিতগণই দিয়েছিলেনখ্রীষ্টীয় প্রথম দিক দ্বিতীয় শতাব্দীতে বাৎসায়ন নামক এক পন্ডিত কামসূত্রনামক একখানি সুন্দর পুস্তক রচনা করেছিলেন ব্যাৎসায়নের পূর্বেও প্রায় দশজন পন্ডিত নারী-পুরুষের সেক্স বৃত্তিকে অধ্যয়নের বিষয়ীভূত করার উপকরণ নারী-পুরুষের সেক্স বৃত্তিকে অধ্যয়নের বিষয়ীভূত করার উপকরণ রেখে গিয়েছিলেন, ব্যাৎস্যায়নের কামসূত্র সেই প্রাচীন হলেও তাতে বিষয়টি এমন ধারাবাহিক প্রণালীতে আলোচিত হয়েছে যে, তা ভাবলে বিস্মিত হতেহয়সেসব আলোচনার মাঝেও যে অন্তর্দৃষ্টি দেখতে পাওয়া যায় তা কিছুটা হলেওআধুনিক বৈজ্ঞানিকের মততবে পুরাতন পুঁথি হিসেবে এটি যৌনতত্ত্ববিদদের কাছে আদরণীয় হলেও সাধারণ পাঠক পাঠিকা এগুলো হতে তেমন কোনো বিশেষ উপকার লাভ করতে পারবেন নাকারণএসব পুস্তক প্রণয়নের সময়ে শরীর বিদ্যা বা এনাটমি অপূর্ণাঙ্গ ছিল এবং সেসব কারণে এসব পুস্তকগুলোতে অবিশ্বাস ওকল্পনার প্রভাবই বেশি রয়ে গেছেব্যাৎসায়নের কামসূত্র ছাড়াও সংস্কৃত সাহিত্যে আরও কিছু যৌনশাস্ত্রের পুস্তক পাওয়া যায় এদের মধ্যে কোক্কক পন্ডিতের কামশাস্ত্রই প্রধান
কোক্কক পন্ডিত বেনুদত্ত নামক এক রাজার মন সন্তুষ্টির জন্য কোক শাস্ত্রবা রতি রহস্য নামক পুস্তক প্রণয়ন করেছিলেন এই কোক্কক পন্ডিতের উক্ত পুস্তক তদানীন্তন ও পরবর্তী সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশে এত জনপ্রিয় হয়েছিল যে রতিশাস্ত্র বা সেক্সোলোজি অবশেষে শুধু মাত্র কোক শাস্ত্র নামেই পরিচিত হয়ে গিয়েছিলসংস্কৃত ভাষায় রতি শাস্ত্র বা সেক্স বিষয়ক শেষ পুস্তক কল্যাণ মলল নামক এক পন্ডিতের রচিত আনন্দ রঙ্গএই পুস্তকটি খ্রীষ্টীয় পঞ্চদশ শতাব্দিতে লোদী পরিবারেরকোনো এক রাজার অনুরোধে পন্ডিত কল্যাণ মলল কর্তৃক রচিত হয়েছিলএছাড়াও ঋষি নাগার্জুন তার প্রিয় শিষ্যকে উপদেশ দেয়ার ছলে সিদ্ধ বিনোদন নামক এক প্রকার যৌন শাস্ত্র প্রণয়ন করে গেছেন বলে বর্ণিত আছে
রোমীয় সম্রাটগণও সেক্স বা যৌনতা বিষয়ে যথেষ্ট মনোনিবেশ করেছিলেনসেজন্য ক্যাটুলাস, টিবুলাস, পেট্রোনিয়াস, মার্শাল, জুভেনাল প্রভৃতি বহু কবি ও পন্ডিতরা তাদের লেখায়, কবিতায় রস বচনীয় এবং প্রবেসেক্স বা যৌনতা বিষয়ে আলোচনা করে গেছেনইউরোপের প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েড প্রথম এবং পরে হ্যাভলক এলিস প্রভৃতি বিজ্ঞানীরা সেক্সোলোজিস্ট বা যৌনবিজ্ঞান সম্পর্কে বৈজ্ঞানিক যুক্তিপূর্ণ গবেষণাসহ বিশ্লেষণ করেছেন
যৌন পথ প্রদর্শক ফ্রয়েডঃ ইউরোপের ভিয়েনা শহরের বিখ্যাত মনস্তাত্ত্বিক চিকিৎসক ফ্রয়েডই প্রথম আবিষ্কার
করেন যে, মানুষের শরীরের মত মনেরও রোগ হয়সম্ভবত তিনিই সর্ব প্রথম গবেষণার দ্বারা প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের মনে প্রতিনিয়ত যে সব চিন্তা-ভাবনা, ইচ্ছা-কামনা ও অনিচ্ছার সৃষ্টি হচ্ছে তারও একটা কারণ রয়েছেআরযা কিনা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দ্বারাই প্রমাণকরা সম্ভবআর এই মনস্তাত্ত্বিক চিন্তা-ভাবনার পেছনে রয়েছে নারী-পুরুষের যৌন জীবনেরপ্রেরণাফ্রয়েডই প্রথম যিনি মানুষের বিচিত্র সব মানসিকতার পূর্ণ বিশ্লেষণ করে সেই প্রাচীন চিরাচরিত ধারণাটা বদলে দিয়েছেনবিংশ শতাব্দির চিন্তার জগতে তার এই অবদান মানব সমাজে যেন বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছেযৌন মনস্তত্ত্ব (সেক্সুয়াল সাইকোলজি) এবং মনোসমীক্ষণ বা সাইকো এনালাইসিসের শুরু বিজ্ঞানী সিগমন্ড ফ্রয়েডথেকেইআর সেই কারণে সারাবিশ্বের বিদগ্ধ মানুষ জনের বিচারে যৌন মনো বিজ্ঞানে ফ্রয়েডের স্থানসবার আগেফ্রয়েডের মতে কামভাবটা নারী-পুরুষের একটা স্বাভাবিক প্রবৃত্তি (ন্যাচারাল টেনডেন্সি) এবং এর অনুপস্থিতি ঘটলে কোনো নারী কিংবা পুরুষ স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে পারে নাসিগমন্ড ফ্রয়েড একাধারে যৌন মনোবিজ্ঞানের প্রথম বৈজ্ঞানিক, তারপর প্রথম চিকিৎসক এবং প্রথম যৌন পথপ্রদর্শকতার অবদান চিকিৎসা বিজ্ঞানে ভুলবারনয়তার রচিত 'Three contributions to the theory of sex' নামক গবেষণা ধর্মী বইটি মেডিকেল বিজ্ঞানের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে

No comments:

Post a Comment