Tuesday, November 6, 2012

যোনির শুষ্কতা এবং নারী-পুরুষের সম্পর্কজনিত সমস্যা



অনেক পুরুষই বিশ্বাস করেন যে, নারীকে যখন যৌনভাবে পূর্ণ শিহরিত বা পুলকিত না করা হয় তখন তারা বুঝি যোনমিলনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেতারা অনেক সময় ধরে নেয় যে, অন্তরঙ্গ যৌন পার্টনারটিতার সঙ্গে সেক্সুয়াল সম্পর্ক বজায় রাখতে চাচ্ছে নাএটি আসলে একটিএকতরফা সিদ্ধান্তএতে করে যৌন পার্টনারদের মধ্যেও সম্পর্কজনিত নানাজটিলতা দেখা দিতে পারেনারী-পুরুষের পারসপরিক সম্পর্কজনিত জটিলতার ফলশ্রুতিতে সঙ্গমের সময় বা তার পূর্ব মুহুর্তে যোনিতে শুষ্কতা দেখা দিতে পারে
আবার কতক নারীর একটি ভ্রান্ত ধারণা রয়েছেসেটি হল তারা ধরেই নেয় যে, যৌন সঙ্গমকালীন বা যৌন সঙ্গমের ঠিক পূর্ব মুহুর্তে যোনি পর্যাপ্ত পরিমাণে আর্দ্র বা ভেজা হওয়া চায়এটিও একটি ভুল ধারণা কাজেই দেখা যাচ্ছে উভয় পার্টনারের ভ্রান্ত ধারণাজনিত কারণেযোনিতে শুষকতা দেখা দিতে পারেপ্রায় সময়েই এস্ট্রোজেন হরমোনের ঘাটতিজনিত কারণে নারী যোনিতে আর্দ্রতার কিছু অভাব উপলব্ধি করতে পারেএজন্য এস্ট্রোজেনকে বলা হয় প্রাথমিক ফিমেল হরমোনএটি সারাজীবনব্যাপী নারীর ওভারি বা গর্ভাশয় থেকে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায় উৎপন্ন এবং নিঃসৃত হয়একটু আগেই উল্লেখ করা হয়েছে বাচ্চা জন্মদানের পর এস্ট্রোজেন লেবেল খুব কমে যায়যেসব নারীদের মনোপজ বা রজঃনিবৃত্তি হয়ে গেছে তাদের গর্ভাশয়েরও এস্ট্রোজেন উৎপাদনের মাত্রা আগের চেয়ে অনেক কমে যায়তবে যোনিতে শুষকতার আরো অনেক কারণ থাকতে পারে যার মাঝেমনোদৈহিক চাপ বা স্ট্রেস অন্যতমপরিসংখ্যানগত ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে পরিলক্ষিত হয়েছে যে, মনোদৈহিক চাপজনিত কারণে জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে শতকরা ৯৫ ভাগ নারী যোনি শুষকতা নানা উপসর্গ ও লক্ষণে ভুগে থাকে
কেমোথেরাপি, হিস্টেরেকটমি এবং যোনি শুষ্কতা
আমেরিকাতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, প্রায়ই ১৪ মিলিয়ন নারী কেমোথেরাপি নামক চিকিৎসানিচ্ছেএই কেমোথেরাপির চিকিৎসা ব্যবস্থাজনিত কারণে যোনিতে তীব্রমাত্রা শুষকতা বিরাজ করতে পারেবিশেষত এতে যদি পেলভিক বা শ্রোণিএলাকা জড়িত থাকেএই চিকিৎসা জটিলতার কারণে হরমোন উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয় এবং আর্দ্রতা সাথে সাথে আগের চেয়ে অনেক কমে যায়ফলশ্রুতিতে নারী-পুরুষেরযৌনমিলন অস্বাচ্ছন্দ্যকর এমনকি ব্যাথাপূর্ণ হতে পারেঅনেক নারী রয়েছে যারা এই সমস্যায় পড়ে তাদের জীবন থেকে সঙ্গমমূলক বা ইন্টারকোর্স জাতীয় যৌন আচরণ সম্পূর্ণভাবে পরিহার করে চলেএসব নারীরাও তাদের যোনির শুষকতা এড়াতে কোনো ভাল লুব্রিকেন্টের সহায়তা নিতে পারেপ্রায় ১২.৫ মিলিয়ন আমেরিকান নারীর জরায়ু বা ইউটেরাস অথবা ওভারি সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা হয়েছেযেহেতু ওভারি থেকে মূলত এস্ট্রোজেন হরমোনটি উৎপত্তি লাভ করে সেখানে ওভারি কেটে ফেলে দিলে কি ঘটতে পারে তাতো বুঝতেই পারছেনএসময়ে যোনির তীব্র শুষ্কতাজনিত কারণেঅস্বাচ্ছন্দ্যবোধ, ব্যথাঅথবা সঙ্গমকালীন সময়ে যোনি দিয়ে রক্তপাতও হতে পারেঅনেক ক্ষেত্রেই এসকল নারীরা এস্ট্রোজেন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি বা ইআরটি-এর সহায়তা নিতে পারে নাকেননা এতে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি রয়েছেতাই যেসকল নারীর জরায়ু বা গর্ভাশয় কেটে ফেলা হয়েছে তাদের ক্ষেত্রেও যৌন মিলনের সময় কোনো ভাল লুব্রিকেন্টস ব্যবহার করা আবশ্যক
পরিসংখ্যানজনিত আগ্রহ
নারীরা কি তাদের যৌন অন্তরঙ্গতাকে উন্নীত করতে চান?
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে যে, যুক্তরাষ্ট্রে শতকরা ৫৪ ভাগ বা তার চেয়ে বেশি নারী তাদের যৌন উৎকর্ষতা ও যৌনানন্দ বাড়াতে তীব্র আগ্রহ প্রকাশ করেছে এদের মাঝে ছিল ১৮-৭৫ বছর বয়সী ৭৩ মিলিয়নেরও বেশি যৌন ক্রিয়ায় সক্ষম নারী এদের বেশিরভাগই এমন কোনো প্রোডাক্টস বা ওষুধ চায় যা তাদের যৌনমিলনকে আরো মধুর ও তীব্রময় করে তুলবে
১৯৯০ সালে গেলআপ সার্ভিস থেকে দেখা যায় যে, যৌন উৎকর্ষতা এবং যৌনানন্দ বাড়াতে দম্পতিদের নিম্নোক্ত পরিসংখ্যানঃ
*. ৫৩% মনে করে বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্য সেক্স করা জরুরি
*. ৫১% জীবনকে অতিরিক্ত ভালোবাসা ও রোমাঞ্চে ভরিয়ে তুলতে চায়
*. ৪৮% যৌথভাবে খেলাচ্ছলে যৌন আচরণে অভ্যস্ত
*. ৪৫% সেক্স নিয়ে মরাল বা নৈতিকতার প্রশ্ন নিয়ে মাথা খাটায়
*. ৩৯% সেক্স লাইফ বা যৌনজীবনকে উন্নীত করণে অনেক চেষ্টা করে থাকে
*. ২৮% যৌন আচরণের সময় পারসপরিক সাহচর্যার ভিত্তিতে একজন আরেকজনের পশ্চাৎদেশ মেসেজ করে দেয়
*. ২৭% মনে করে পূর্বের তুলনায় যৌন আত্মবিশ্বাস অনেক কমে গেছে
*. ২৬% যৌন আচরণে কোনো রকম বিধিনিষেধ বা প্রতিবন্ধকতাকে সম্পূর্ণভাবে এড়িয়ে চলে
*. মনোদৈহিক চাপ/ স্ট্রেস যেভাবে যৌন অন্তরঙ্গতাকে প্রভাবিতকরে
যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৪৭ মিলিয়ন নারী রয়েছে যাদের বয়স ১৮-৩৯ বছরের ভেতরে এবং ২৬ মিলিয়ন নারী রয়েছেযাদের বয়স ৪০-৭৫-এর ভেতরেএরা যৌনক্রিয়ায় সক্ষমতাহলে এদের মোট সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৭১ মিলিয়ননারীদের যোনিতে শুষ্কতা বিরাজ করার সাথে সরাসরি যে হরমোনটি জড়িত সেটি হল এস্ট্রোজেন এবং আর্দ্রতাজনিত ফ্যাক্টর হল বাথো
বার্থোলিন গ্রন্থি মূলত শরীরের চাহিদা অনুযায়ী অন্তরঙ্গ সম্পর্ক স্থাপনের পূর্বে পর্যাপ্ত পরিমাণে তরল নিঃসৃত করে থাকেযদিও এইগ্রন্থিগুলো মস্তিষক থেকে সিগন্যাল বা সংকেত পেয়ে থাকেতথাপি এটিও সত্য যে, অনেক নারীর ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, কোনো পর্যায়ে এই ক্ষুদ্রগ্রন্থিদ্বয় অকার্যকর বা ডিসফাংশনাল হয়ে যেতে পারেএকটি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, শতকরা ৯৫ ভাগ যৌন সক্ষম নারীর কোনো না কোনো পর্যায়ে ডিসফাংশন দেখা দিয়েছেএই অকার্যকারিতাবা ডিসফাংশনের মূলে রয়েছেঃ স্ট্রেস বা মনোদৈহিক চাপ, অন্যান্য মানসিক চাপ যেমন- অন্তঃসম্পর্কজনিত টেনশন,অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক চাপ, চাকরিজনিত নানা মানসিক চাপ এবং আধুনিক জীবনের দৈনন্দিন স্ট্রেসআবার অনেক নারীর বেলায় দেখা যায় যে যোনিতে একবার শুষকতা বিরাজ করলে এরা প্রচন্ড ঘাবড়িয়ে যায়এরা মনে মনেধারণা করতে থাকে আবারো একই ঘটনা ঘটতে পারেএটি বিশেষত অল্প বয়সের নারীদের মাঝে বেশি দেখা যায়এসকল নানা চাপজনিত কারণেই বা অন্যান্য শারীরিক কারণেই হোক না কেন লুব্রিকেন্টস যোনির শুষ্কতা কমাতে তাৎক্ষণিকভাবে সহায়তা করে এবং এতে উভয় সেক্স পার্টনার অন্তরঙ্গ অনুভূতি লাভ করে থাকে
 

No comments:

Post a Comment